Breaking

Friday, July 14, 2017

গাইবান্ধায় ত্রানের জন্য হাহাকার, চরম দুর্ভোগে পানিবন্দি ৩ লক্ষাধিক মানুষ


নদ-নদীর পানি অপরিবর্তিত থাকলেও গাইবান্ধার চার উপজেলার ৩০ ইউনিয়নে পানিবন্দি লাখো মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন তারা। সরকারি উদ্যোগে কিছু এলাকায় বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা ও নগদ টাকা দেওয়া হলেও তা চাহিদা অনুযায়ী একবারেই অপ্রতুল্য বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল দুপুর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও ঘাঘট নদীর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যুমনা নদীর পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও ঘাঘট নদীর পানি একই রয়েছে।

এক সপ্তাহ ধরে এসব মানুষ পানিবন্দি থাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। সব বয়সী মানুষ জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি গবাদি পশু গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যাদুর্গতরা। বাধ্য হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে উচু বাঁধ, রেলের জায়গা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে সেখানে দিন কাটাতে হচ্ছে গাদাগাদি করে।

ইতোমধ্যে জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। তবে এসব শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে বন্ধের দিন ক্লাস চালু রেখে শিক্ষার্থীর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে। এছাড়া চরাঞ্চলের ছোট-বড় অনন্ত ২০টি বাজার ও অনেক দোকানপাঠ বন্ধ রাখা হয়েছে।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তীব্র স্রোত ও পানির চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশ কয়েকটি এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডেন নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়া-রতনপুর, কাতলামারী, রতনপুর, কঞ্চিবাড়ির কাইয়াহাট এলাকার বাঁধের গর্ত দেখা দেয়। ফলে আতষ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে স্থানীয়দের সহায়তায় মাটির বস্তা ফেলে ভরাট করা হয়। এসব ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে গেলে ফুলছড়ির উপজেলা পরিষদসহ নতুন নতুন এলাকার প্লাবিত হবে। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়বেন অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ।

এদিকে মঙ্গলবার বিকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু করা হয়েছে। বুধবারও সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, ফুলছড়ির কাবিলপুর, সদর উপজেলার ভরতখালি ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের বন্যাদুর্গতরা ত্রাণ হিসেবে চাল ও নগদ টাকা পেয়েছেন। তবে যে পরিমাণ সাহায্য দেওয়া হচ্ছে তা একেবারেই অপ্রতুল্য বলে অভিযোগ করেছেন বন্যাদুর্গতরা।

রতনপুর চরের পানিবন্দি আমেনা বেগম বলেন, সাতদিন ধরে ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। পানি উঠা ঘরেই চকির ওপর চুলা উঠিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। ঘরের খাবার তো শেষ। হাতের টাকাও শেষ। এখন দিন চলবে কেমনে সে চিন্তা করছি। এখন পর্যন্ত কোনও ত্রাণ পাইনি। স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও আমাদের কোনও খোঁজ নেয়নি।

গুনভরি গ্রামের আয়নাল হক ও জামাল শেখ বলেন, পানির কারণে ছেলে, মেয়ে ও দুই নাতি নিয়ে জ্বরে ভুগছি। চিকিৎসার জন্য কোনও ঔষুধও কিনতে পারছি না। গ্রামের ডাক্তার দুটি করে ট্যাবলেট দিয়ে গেছেন, তা দিয়ে জ্বর কমেনি।

উদাখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল্য এতো কম ত্রাণ সামগ্রী বন্যাদুর্গতদের মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। তিনি সরকারের নিকট আরও বেশি ত্রাণের দাবি জানান।

উড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন বলেন, সরকারিভাবে পানিবন্দি মানুষের জন্য ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বন্যাদুর্গতদের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, জেলা প্রশাসনের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত মানুষের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকায়ও ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হবে।

তিনি আরও বলেন, দুর্গত এলাকার পানিবন্দি মানুষদের মাঝে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে জেলা সির্ভিল সার্জন কার্যালয় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর উদ্যোগে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। গ্রুপ ভিত্তিকভাবে মেডিক্যাল টিম দুর্গত এলাকায় কাজ করছে। তারা পানিবাহিত রোগে আক্রান্তদের মধ্যে প্রয়োজনীয় ঔষুধ বিতরণ অব্যহত রেখেছেন।